Last Updated on 8 months by Shaikh Mainul Islam
আল্লাহ পবিত্র কোরআনে প্রতিদিন নির্দিষ্ট কয়েকটি সময়ে নামাজ পড়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। আর তাই নামাজের নিষিদ্ধ সময় সম্পর্কে জানা জরুরি।
প্রিয় পাঠক, স্বাগত Dainik Kantha এর আজকের পোস্ট “নামাজের নিষিদ্ধ সময় সমূহ । আজকের সালাতের নিষিদ্ধ সময়” এ।
আজকের পোষ্টে আমরা নামাজের নিষিদ্ধ সময়, নামাজের নিষিদ্ধ সময় হাদিস, আজকের সালাতের নিষিদ্ধ সময় কখন সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানবো।
নামাজের নিষিদ্ধ সময় সমূহ কয়টি ও কি কি
আল্লাহর নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা তিনটি সময়ে সবরকম নামাজ থেকে বিরত থাকবে”।
প্রিয় পাঠক, আমাদের নবী (সাঃ) তিনটি সময়ে আমাদের সবরকম নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকতে বলছেন। যেখান থেকে স্পষ্ট যে সালাতের বা নামাজের নিষিদ্ধ সময় তিনটি। চলুন হাদিসের আলোকে জেনে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুনঃ লাইলাতুল কদর সূরা (বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ, ফজিলত সহ বিস্তারিত)
- সূর্যোদয়ের সময়ে। (সকাল বেলা পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠার শুরু থেকে একদম স্পষ্ট আলো না হওয়া পর্যন্ত।
- (সূর্য যখন ঠিক মাথার উপরে) ঠিক দুপুর বেলা। অর্থাৎ সূর্য যখন ঠিক মাথার উপর থাকবে তখন নামাজ পড়া নিষেধ।
- সূর্যাস্তের সময়। আসরের ওয়াক্ত শেষে সূর্য পশ্চিম আকাশে লালচা আভা যতক্ষণ পর্যন্ত থেকে ডুবতে থাকবে।
তথ্য সুত্রঃ বুখারি হাদিসের ৫৫১ নাম্বার। এবং মুসলিম হাদিসের ১১৮৫ নাম্বার হাদিস।
অন্যদিকে সহীহ আল বুখারি হাদিসের ১১৯৭ নাম্বার হাদিসে উল্লেখ যে, একদা নবীজি (সাঃ) বলেন,
দুই ফরজ নামাজের পরে কোনোরকম নফল বা সুন্নত নামাজ নাই। আর সেই দুই ওয়াক্ত নামাজ হচ্ছে ফজর এবং আসর।
অর্থাৎ ফজরের নামাজের পর সূর্য ভালোভাবে ওঠা পর্যন্ত এবং আসরের নামাজের পর সূর্য ভালোভাবে ডোবা পর্যন্ত কোনও ধরনের নামাজ পড়া যাবে না। -(সহীহ আল বুখারি হাদিসঃ ১১৯৭ নাম্বার হাদিস)
একইভাবে সহীহ বুখারি হাদিসের ১১৯২ নাম্বার হাদিসে স্পষ্ট যে, ফজর এবং নফল নামাজের পড়ে নফল নামাজ আদায় করাও মাকরুহ।
এর কারণ নফল নামাজ পড়তে গিয়ে নিষিদ্ধ সময় পার হয়ে যেতে পারে।
সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত এই দুইটি সময় ভালো ভাবে বুঝলেন। কিন্তু ঠিক দুপুর বেলা বলতে কি বুঝছেন?
ঠিক দুপুর বেলা বলতে, সূর্য যখন ঠিক মাথার উপরে থাকবে। অর্থাৎ, যখন আপনার মাথার উপর সূর্য থাকবে তখন আপনি আপনার নিজের প্রতিচ্ছবি বা ছায়া দেখতে পাবেন না।
অর্থাৎ, আপনি যদি বাহিরে বের হয়ে রোদে দাঁড়ান, দেখবেন আপনার কোনও ছায়া দেখতে পাবেন না। ঠিক এই মুহূর্ত তা হচ্ছে মধ্য দুপুর।
এই তিন সময়ে ব্যতিত অন্য সবসময় নামাজ, সালাত সহ সব ধরনের ইবাদত করা যাবে।
আশা করছি বুঝতে পারছেন। এবার চলুন নিষিদ্ধ সময়ের নির্দিষ্ট সময় জেনে নেওয়া যাক।
নামাজের নিষিদ্ধ সময়ের নির্ধারিত সময় সমূহ জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, স্থান কাল, অঞ্চল ভেদে একেক জায়গায় একেক দিন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় ভিন্ন থাকে।
তাই ঘড়ি ধরে নির্ধারিত সময়ে নামাজের নিষিদ্ধ সময় উল্লেখ করা যায় না।
আপনি যদি কোনও একদিনে আপনার অঞ্চলের নামাজের নিষিদ্ধ সময় জানতে চান তাহলে ওখানের সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় জেনে নিতে হবে।
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর হাদীসের নামে জালিয়াতি বইটি কিনতে এখানে ক্লিক করুন
তবে আপনি চাইলে তিনটি উপায়ে নামাজের তিনটি নিষিদ্ধ সময় বুঝে নিতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন লক্ষণ দেখে নামাজের নিষিদ্ধ সময় বুঝে নেওয়া যাবে।
সূর্যোদয়ঃ সূর্যোদয় বলতে সূর্য ওঠাকে বোঝায়। অর্থাৎ সকাল বেলা আমরা পূর্ব আকাশে যে সূর্য উঠতে দেখি।
ফজরের নামাজের পরে সূর্য যখন পূর্ব আকাশে উঠতে শুরু করে সেই থেকে সূর্য একদম উঠে চারিদিক স্পষ্ট দেখতে পাওয়া না পর্যন্ত কোনও ধরনের নামাজ পড়া যাবে না।
আরও পড়ুনঃ সূরা তারাবি পড়ার নিয়ম । সূরা তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত
সূর্যাস্তঃ আসরের ওয়াক্তের পর সূর্য পশ্চিম আকশে ডুবতে শুরু করে। তখন সূর্য লাল আকার ধারণ করে।
সেই লালচে বর্ণের সূর্য একদম ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত। অথাত আসরের ওয়াক্ত শেষে মাগরিবের আজান পর্যন্ত নামাজের নিষিদ্ধ সময়।
ঠিক দুপুর বেলাঃ সূর্য যখন একদম বরাবর মাথার উপর থাকবে, তখন নামাজ পড়া নিষেধ।
আরও পড়ুনঃ তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ ( চার রাকাতের দোয়া সহ)
এটা বোঝার জন্য আপনি বাহিরে রোদে দাড়ালে দেখতে পাবেন আপনার কোনও ছায়া বা প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন না। এই সময়কে বলা হয় ঠিক দুপুর। তখন কোনোপ্রকার নামাজ পড়া নিষিদ্ধ।
তবে, সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত করে তিন সময়ে নামাজের নিষিদ্ধ সময় চলে।
অর্থাৎ, ওইদিন আবহাওয়া অফিস যদি বলে ৬ টায় সূর্য উঠবে তাহলে ৬ টা ২০ মিনিট পর্যন্ত নামাজের নিষিদ্ধ সময় চলে।
এভাবে ২০ মিনিট পর্যন্ত বাদ দিয়ে নামাজ আদায় করলেই নিষিদ্ধ সময় সমূহ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
সালাতের নিষিদ্ধ সময় সম্পর্কিত FAQS
নামাজের নিষিদ্ধ সময় তিনটি। সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং বরাবর দুপুর।
আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিষেধ আছে তিন সময়ে নামাজ আদায় করা। সেই থেকেই এই তিন সময় নামাজের নিষিদ্ধ সময়।
এই সময়ে কেউ নামাজ পড়লে তা নবীজির কথার অমান্য হবে। এটা মাকরুহ।
আলেমদের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন,
“নামাজের নিষিদ্ধ সময়ে নামাজ পড়া তো দুরের কথা। এই সময়ে জানাজা নামাজও পড়া যাবে না। এবং তিলাওয়াতে সিজদাহ ও করা যাবে না। এগুলি করলে তা মাকরুহ হবে”। -(মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানাভী (রহঃ))
তবে বিশেষ যথেষ্ট কারণ থাকলে মৃতকে জানাজা দিয়ে দাফন দেওয়া যাবে। তবে এটি ঠিক না।
হ্যাঁ যাবে। তবে তিলাওয়াতের মধ্যে সিজদাহ আসলে তা দেওয়া যাবে না। (যুগান্তর থেকে সংগ্রহীত)
না। কারণ সূর্য লাল হতে শুরু হওয়া মানেই নামাজের নিষিদ্ধ সময় শুরু হয়ে গেছে।
আর নামাজের নিষিদ্ধ সময় সমূহ চলাকালিন নামাজ আদায় করা যাবে না।
না। নিষিদ্ধ সময়ে ফজরের নামাজ নয় শুধু, বরং কোনও নামাজ-ই পড়া যাবে না।
একেক দিন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত একেক সময় হওয়ায় নির্ধারিত করে বলা যায় না যে কখন মানে কয়টার সময়ে নামাজের নিষিদ্ধ সময়।
তবে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং সূর্য যখন ঠিক মাথার উপরে থাকবে এমন সময় থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত নামাজের নিষিদ্ধ সময় ধরে হিসেব করলেই হয়।
যেমন, ৬ টায় সূর্যোদয় হলে ৬ তা ২০ মিনিটে সকালের নামাজে নিষিদ্ধ সময় শেষ। ঠিক একই ভাবে অন্য দুইটি নিষিদ্ধ সময়ে হিসেব করে করতে পারেন।
নামাজের নিষিদ্ধ সময় সম্পর্কে সর্বশেষ
প্রিয় পাঠক, আজকের পোষ্টে আমরা নামাজের নিষিদ্ধ সময় সমূহ সম্পর্কে জেনেছি। জেনেছি নামাজের নিষিদ্ধ সময় কত মিনিট সে সম্পর্কে।
আরও পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজের নিয়ম । শবে কদরের নামাজের নিয়ত (বিস্তারিত)
এছাড়াও নিষিদ্ধ সময়ে নামাজ পড়লে কি হয় বা কি পাপ হয় তা জেনেছি। জেনেছি সালাতের নিষিদ্ধ সময় নিয়ে হাদিস সমূহ সম্পর্কে।
আশা করছি এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিয়ে বুঝাতে পেরেছি। এরপরেও আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানান।
এছাড়াও নামাজ এবং ইসলাম সম্পর্কিত আমাদের অন্যান্য সকল পোষ্ট পড়তে Islamic info Category ভিজিট করুন।
নিয়মিত আমাদের সকল পোষ্ট পড়তে Dainik kantha ভিজিট করুন।
সর্বশেষ আপডেট পেতে চোখ রাখুন অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ।
উপরের এক প্যারায় লেখা রয়েছে যে-
“এই তিন সময়ে ব্যতিত অন্য সবসময় নামাজ, সালাত সহ সব ধরনের ইবাদত করা যাবে না।“
—এতে কি বুঝানো হয়েছে?
লেখাটিতে (না) শব্দটি হবে না। আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এমন মিস্টেক করার জন্য।
লেখাটি ইতিমধ্যে সংশোধন করা হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা এমন ভুল না হওয়ার দিকে বিশেষ ভাবে নজর রাখবো।
আমাদের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ।